Physical Address
23,24,25 & 26, 2nd Floor, Software Technology Park India, Opp: Garware Stadium,MIDC, Chikalthana, Aurangabad, Maharashtra – 431001 India
Physical Address
23,24,25 & 26, 2nd Floor, Software Technology Park India, Opp: Garware Stadium,MIDC, Chikalthana, Aurangabad, Maharashtra – 431001 India
Translated by: Rahul Adhikari
“এই বার কোনও কারণে বিষয়টা একটু আলাদা। বৃষ্টির দেবতারা এর আগে কোনদিন এতটা নির্দয় হয়নি। আমি মনে করতে পারছি না শেষ কবে এত কম সময়ে এত বেশি বৃষ্টি হয়েছিল,” অসম বন্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করায় বলেন মুকুট দাস। তিনি হলেন অসমের মরিগাঁও জেলার একজন দরিদ্র কৃষক। এই বৃষ্টিপাতের পেছনে ‘জলবায়ু পরিবর্তনে’ কতটা হাত রয়েছে তা হয়ত মুকুট জানেন না কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেইযে অসম এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় তুমুল বৃষ্টিপাত হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
খুব কম সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত
এই বছর, প্রাক-বর্ষা অসমে অস্বাভাবিকভাবে আর্দ্র ছিল। ১ মার্চ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত রাজ্যে ৭৫৪.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এই মাত্রা গড়ের তুলনায় ৪৮% বেশি ছিল। মে মাসে, অসমে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৬% বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং জুনের প্রথম 1 দিনে ক্রমবর্ধমান ৫২৮.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল যা গড়ের তুলনায় ১০৯% বেশি। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে অসম, মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশে যথাক্রমে ১৭০, ২০৩ এবং ৬৫ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১৭ জুন তারিখে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (IMD) অনুসারে ১২২ বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। অর্থাৎ খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি প্রতিষ্ঠানের রক্সি ম্যাথিউ কোল নামে একজন জলবায়ু বিজ্ঞানী টাইমস অফ ইন্ডিয়ার জন্য লিখেছেন, “১৯৫০-এর দশক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষার ধরণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখা গিয়েছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন হল বর্ষা মৌসুমে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পরিবর্তে, আমরা দীর্ঘ শুষ্ক বর্ষাকালে কম সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত দেখতে পাচ্ছি কারণ বিশ্ব উষ্ণায়নের সাথে সাথে বাতাসের আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা বেড়েছে।”
তিনি আরও বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করেন কীভাবে দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি হয় না এবং যখন হয় কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে সমস্ত আর্দ্রতা নিচে নেমে যায়। ফলস্বরূপ আমরা মাসের মধ্যে মাত্র ক বা দুই দিন বৃষ্টি দেখতে পাই।
IMD-এর তথ্যের উপর ভিত্তি করে পুনে-ভিত্তিক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি দ্বারা ২০১৭ সালে পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, ১৮৭০ সাল থেকে অসমে গড় মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। গবেষণার লেখকরা আরও ব্যাখ্যা করেছেন যে প্রতিদিনের বৃষ্টিপাতের তথ্য পরিষ্কারভাবে আকস্মিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি এবং অল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বেশ কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন্যা
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অসম এবং প্রতিবেশী কয়েকটি রাজ্যে মে এবং জুন মাসে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে যার ফলে বন্যা এবং ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক নয়।
রক্সি ম্যাথিউ কোলের মতে, উত্তর-পূর্ব ভারতে যে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তা বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হতে পারে।
কোলে ডাউন টু আর্থ ম্যাগাজিনকে বলেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরে চলমান লা নিনা ইভেন্টের সাথে ভারত মহাসাগরে একটি নেগেটিভ ইন্ডিয়ান ওশান ডিপোল (আইওডি) গঠন বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে শক্তিশালী করেছে।
লা নিনা অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন মধ্য-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শীতল হয়। নেগেটিভ আইওডি ঘটে যখন ভারত মহাসাগর পশ্চিমে শীতল এবং পূর্বে উষ্ণ থাকে।
তিনি আরও বলেছেন, “বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গোপসাগরে এই শক্তিশালী মৌসুমি বায়ু এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আর্দ্রতা বহন করতে পারে।”
কোলের বক্তব্য, “বাড়ন্ত তাপমাত্রার সাথে বায়ুমণ্ডলীয় আর্দ্রতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় কারণ উষ্ণ বাতাস বেশি সময় ধরে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সক্ষম। সুতরাং, আমরা এখন যে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিপাত দেখতে পাচ্ছি তা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হতে পারে।”
অসমের মতো উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
৪ জুলাই তারিখে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বন্যা ও ধসের কারণে অসমে ১৭৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং প্রায় ১৮.৩৫ লক্ষ মানুষ এখনও ক্ষতিগ্রস্ত। রাজ্যের ২০টি জেলার ৪১৩টি ত্রাণ শিবিরে মোট ২,৭৮,০৬০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
একাধিক রিপোর্টে ইতিমধ্যেই জোর দেওয়া হয়েছে যে ভারত অস্বাভাবিকভাবে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা প্রবণ। জাতিসংঘ সমর্থিত ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এই বিষয়টি তুলে ধরেছে।
কাউন্সিল অন এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার (CEEW)-এর একটি জলবায়ু সূচক ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে অসমকে বন্যার মতো চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে দেশের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারত বন্যার প্রবণতা বেশি।