Physical Address

23,24,25 & 26, 2nd Floor, Software Technology Park India, Opp: Garware Stadium,MIDC, Chikalthana, Aurangabad, Maharashtra – 431001 India

ভারতে ক্রমবর্ধমান তীব্র তাপমাত্র মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, বলছে রিপোর্ট

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নতুন রিপোর্টে জানা গিয়েছে দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ আগের চেয়ে বেশি বেড়ে গিয়েছে। এই প্রবাহের কারণে গত কয়েক দশকে ভারতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্য হয়েছে। খুব শীঘ্রই দেশে এমন তাপপ্রবাহ দেখা যাবে যা মানুষের বেঁচে থাকার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ভারত বিশ্বের সেই সমস্ত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে যেখানে প্রথম এই তীব্র তাপ প্রবাহ দেখা যাবে। 

ক্লাইমেট ইনভেস্টমেন্ট অপরচিউনিটিস ইন ইন্ডিয়াস কুলিং সেক্টর” নামক বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্টে অনুযায়ী, ভারতে উচ্চ তাপমাত্র খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। 

এই রিপোর্টে বলা রয়েছে যে কীভাবে জলবায়ু বিজ্ঞানিরা আমাদের সতর্কবার্তা দিয়ে এসেছে যা আগামী দিনে বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। বৈজ্ঞানিকরা সতর্ক বার্তা দিয়ে জানায় দক্ষিণ এশিয়ায় তাপমাত্র বাড়বে এবং ভারতের গরমে মানুষের বেঁচে থাকা দায় হয়ে যাবে। 

এই রিপোর্ট অনুযায়ী, “২০২২ সালের এপ্রিলে মাসে, বসন্তের প্রথম দিক ভারত তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে। রাজধানী দিল্লিতে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত পৌঁছয়। মার্চ মাত্রা তাপমাত্রা অসাধারণ ভাবে বৃদ্ধি পায়। এই সময়ই দেশের তাপমাত্রা শীর্ষে পৌঁছয়।”

বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই রিপোর্ট আইপিসিসির ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনের (এআর৬) আগস্ট 2021-এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সতর্ক করে যে ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী দশ বছরে ক্রমবর্ধমান ঘন ঘন এবং তীব্র তাপপ্রবাহ দেখতে যাবে।

এই রিপোর্টে ২০২১ সালের জি৩০ ক্লাইমেট রিস্ক অ্যাটলাসের সতর্কতাও উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, যদি কার্বন নিঃসরণ বেশি হতে থাকে তবে ২০৩৬-৬৫ সাল নাগাদ ভারতে তাপ প্রবাহ ২৫ গুণ বেশি স্থায়ী হবে।

ভারতের ক্রমবর্ধমান তাপ প্রবাহ অর্থনৈতিক উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে

এই রিপোর্টে সতর্কতা জারি করে বলা হয়েছে, ভারতের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদনের ক্ষতি করতে পারে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির মধ্যে তাপ প্রবাহ ভারতকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে যার দলে শ্রমশক্তির দিক থেকে দেশের বার্ষিক ১০১ বিলিয়ন ঘন্টারও বেশি নষ্ট হচ্ছে। 

রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ভারতের শ্রমশক্তির ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বা ৩৮০ মিলিয়ন মানুষ তাপ-উন্মুক্ত শ্রমের উপর নির্ভর করে। কখনও কখনও, প্রাণহানি হতে পারে এমন তাপমাত্রায় কাজ করে। ২০৩০ সাল নাগাদ, তাপমাত্র স্ট্রেস সম্পর্কিত উত্পাদনশীলতা হ্রাসের কারণে প্রত্যাশিত ৮০ মিলিয়ন বৈশ্বিক চাকরির ক্ষতির মধ্যে ৩৪ মিলিয়নের জন্য ভারত একা দায়ী হতে পারে।”

ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই দশকের শেষ নাগাদ ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে হারানো শ্রম ভারতের জিডিপির ৪.৫ শতাংশ বা প্রায় ১৫০-২৫০ বিলিয়ন পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। 

একটি বিশ্বস্ত কোল্ড চেইন নেটওয়ার্কের প্রয়োজন

এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বিশ্বস্ত কোল্ড চেইন নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে খাদ্য ও ঔষধি পণ্য পরিবহনের জন্য একটি কার্যকরী কোল্ড-চেইন রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের দরকার।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যা কোভিড-১৯-এর আগে ভারত, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ওষুধ উৎপাদনকারী, ত্রুটিপূর্ণ কোল্ড চেইনের ফলে প্রায় ২০ শতাংশ তাপমাত্রা-সংবেদনশীল ঔষধি পন্য এবং ২৫ শতাংশ ভ্যাকসিন নষ্ট হয়। এর ফলে প্রায় ৩১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়। 

রিপোর্ট অনুযায়ী, “ভারতে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে কুলিং সিস্টেমের চাহিদাও বাড়বে। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ দৈনিক ২ ডলারের চেয়ে কম আয় করে। অন্যদিকে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ইউনিটের গড় খরচ ২৬০ থেকে ৫০০ ডলারের মধ্যে হতে পারে। এই কারণে এয়ার-কুলিং সিস্টেমের সুবিধা শুধুমাত্র ধনীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ।”

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, “বৈদ্যুতিক পাখা তাপীয় আরাম বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে, তবে এগুলিও ব্যয়বহুল। ফলে দেশের এমন অনেক দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষ রয়েছে যারা ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।” এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা গরম এবং সঠিক বায়ু চলাচল নেই এমন পরিবেশে বসবাস করছে।

সামনের পথ

ভারতের শীতলকরণ পরিকল্পনা একই সাথে মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার জন্য যে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তা কমানোর পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণও অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। 

ইন্ডিয়া কুলিং অ্যাকশন প্ল্যান (আইসিএপি), যার লক্ষ্য হল সকলের জন্য টেকসই শীতল এবং তাপমাত্রা থেকে রেহাই প্রদানে সহায়তা। ভারত বর্তমানে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ভারত সরকার ২০১৯ সালে এই পরিকল্পনা চালু করে। আইসিএপি-এর থিম্যাটিক ক্রস-সেক্টরাল ক্ষেত্রগুলি ছিল বিল্ডিং স্পেস কুলিং, কোল্ড চেইন এবং রেফ্রিজারেশন, এবং পরিবহন শীতাতপ নিয়ন্ত্রক এবং রেফ্রিজারেন্টস।

আইসিএপি লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য গবেষণার লেখকরা নির্দিষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য হস্তক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। 
সমীক্ষায় দেখা গেছে যে উন্নয়ন ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কের অর্থায়ন ভারতকে এই লখ্যে পৌঁছতে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

Translated by: Nasim Akhtar

,
Manjori Borkotoky
Manjori Borkotoky
Articles: 1